আজিজুল ইসলাম,পিরোজপুর প্রতিনিধি: ডাক্তার ও শয্যা সংকটে বেহাল অবস্থায় নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কাগজ কলমে হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও বর্তমানে ১৯ শয্যায় চলছে পুরো চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। প্রতিনিয়ত অত্র উপজেলা সহ পাশ্ববর্তী উপজেলা থেকে নানা রোগ সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় কয়েকগুন রোগী। যে কারনে শয্যা সংকটে রোগীরা মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যার ভবনে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পর ২০১০ সালের ৩ আগস্ট ১৯ শয্যার নতুন একটি ভবনে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর দুটি ভবন মিলিয়ে ৫০ শয্যায় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছিল রোগীরা। কিন্তু ৩১ শয্যার ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে ২০২০ সালে তা অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে ১৯ শয্যার ভবনেই চলছে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর চিকিৎসা কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে শয্যাসংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। শয্যা সংকটের পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসক সংকট। হাসপাতালে চিকিৎসকের ২১টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি পদেই জনবল নেই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদে লোক নেই দুই মাস ধরে। মেডিকেল অফিসার দশটি পদের বিপরীতে ছয়টি পদই ফাকা। এ ছাড়া জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১০টি পদের ৮টি পদই শূন্য। দুইজন জুনিয়ার কনসালন্টেন পদে যে দুইজন ডাক্তার রয়েছে তাদের মধ্য গাইনি কনসালটেন্ট পদের ডাক্তার সপ্তাহে আসেন মাত্র একদিন। এবং নাক,কান ও গলা (ইটিএন) ডাক্তার সপ্তাহে আসেন দুই দিন মাত্র।
হাসপাতালের ওয়ার্ড ইনচার্জ মিঠু রানী হালদার বলেন, গত এক মাসে (অক্টোবর) হাসপাতালে ১২৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২১৩৪ জন ভর্তি ছিলেন। যারমধ্য ১২৪৫ জন চিকিৎসা নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, এখানে শয্যা ও ডাক্তার সংকট চরমে। ধারন ক্ষমতার চেয়ে তিনগুন রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালে ওয়ার্ডবয়,ক্লিনার সংখ্যা খুবই কম থাকায় হাসপাতাল একটু অপরিস্কার থাকে। তিনি আরো বলেন, গত দুইমাস ধরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচএ) না থাকায় আমাদের বেতন ভাতা তুলতে কষ্ট হচ্ছে।
উপজেলার আরামকাঠি থেকে আসা মোসাৎ রেবেকা বলেন, তার শিশু গত দুই দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। দুইদিন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি। এখানে এসে কোন সিট পাইনি। তাই হাসপাতালের সিড়ির পাশে মেঝেতে বসে বাচ্চার চিকিৎসা নিচ্ছি। এখানে খুবই র্দুগন্ধ,মশার উপদ্রুপ।
একই কথা বলেন, বানারিপাড়া থেকে বাচ্চা নিয়ে ভর্তি হওয়া খাদিজা বেগম। তিনি বলেন, আমার ছোট বাচ্চার ডায়রিয়া নিতে তিন দিন পর্যন্ত হাসপাতালের মেঝেতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখানে সিট না পেয়ে ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখানে খুবই র্দুগন্ধ ও মশার উপদ্রুপ। ঠিকমত ডাক্তার আসেনা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স পলাশি ফরাজি বলেন, হাসপাতালে শয্যা ও ডাক্তার সংকট চরমে। শয্যা সংকটের কারনে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালে ইউএইচএ(স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা) না থাকায় আমাদেরও নানা সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে কয়েকটি উপজেলা থেকে রোগী এসে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। ধারন ক্ষমতার চেয়ে তিনগুন রোগী আসায় বেশি সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত ডাক্তার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি শয্যা বাড়ানো খুবই দরকার।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. শাহারুখ খান জানান, এখানে ডাক্তার সংখ্যা খুবই কম। এছাড়াও রোগীর চাপ বেশি থাকায় দ্রুত শয্যা সংখ্যা বাড়ানো দরকার। রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, দ্রত কর্তৃপক্ষের হাসপাতালে শয্যা ও ডাক্তার বাড়ানো দরকার।
হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা (ইউএইচএ) পদে থাকা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো: নাজমুল হাসান মাসুদ খান জানান, এখানে ডাক্তার সংখ্যা খুবই কম। এছাড়া কাগজ কলমে হাসপাতালটি পঞ্চাশ শয্যার হলেও বর্তমানে উনিশ বেডে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। শয্যার চেয়ে হাসপাতালে তিনগুন রোগী বেশি হয়। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও গত দুই মাস ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএ) না থাকায় আরো সমস্যা হচ্ছে।
পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান জানান, নেছারাবাদ হাসপাতালে শয্যা ও ডাক্তার বাড়ানোর জন্য আমরা একাধিকবার উপর মহলে লিখিত আকারে জানিয়েছি। বর্তমানে যা আছে তা নিয়েই চিকিৎসা কার্যক্রম সুন্দরভাবে চালাতে হবে। কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে শয্যা বৃদ্ধি না করলে আমাদের কি করার আছে। গাইনি কনসালটেন্টের ব্যাপারে তিনি জানান, যে দুইজন হাসপাতালো আছে, তাদের নিয়মিত অফিস করতে হবে। সপ্তাহে একদিন দুইদিন অফিস করলে চলবেনা। বিষয়টি আমি গুরুপ্তের সাথে দেখব।