বাজারে পেঁয়াজ ও আলুর উচ্চমূল্যে চাপে রয়েছেন ভোক্তারা। গত সপ্তাহে বৃদ্ধি পাওয়া এ দুই পণ্যের দাম চলতি সপ্তাহেও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। দাম বেড়ে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ এখন ১৫০ টাকা ও আলুর কেজি ৭৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। প্রতিদিনের রান্নায় প্রয়োজনীয় এ পণ্যগুলোর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পেরে উঠছেন না নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ।
রাজধানীর কদমতলী এলাকার বাসিন্দা মো. এনামুল হক বলেন, প্রতিদিনের রান্নায় পেঁয়াজ প্রয়োজন। এক কেজি পেঁয়াজ কিনতেই যদি ১৫০ টাকা খরচ হয় তাহলে অন্যান্য বাজার খরচ কীভাবে কুলাব। লম্বা সময় ধরে ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় এ নিত্যপণ্যটি। দাম কমছেই না, উল্টো দফায় দফায় আরও বাড়ছে। বিদেশি পেঁয়াজের কেজিও ১২০ টাকা। এভাবে চললে সংসার খরচ কীভাবে সামাল দেব ভেবে পাই না।
এনামুলের চেয়ে আরও বেশি আক্ষেপ প্রকাশ করলেন একই এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশাচালক মো. জনি। তিনি বলেন, দিনে যে সামান্য আয় হয়, তা দিয়ে বাজার খরচ কুলানো যায় না। পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে। সামান্য আলু যদি ৭০-৭৫ টাকা কেজি কিনে খেতে হয়, এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে। বোতল তেলের চেয়ে খোলা তেলের দাম বাইড়া গেছে। অনেক দোকানে বোতল তেল উধাও। সারাটা বছর এসব চলতেই থাকে। এগুলো বন্ধ হইব কবে। বাজারে পেঁয়াজ ও আলুর লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে জনি ও এনামুলের মতো অসংখ্য ভোক্তার হাতাশা বাড়ছে। এর মধ্যে নতুন করে ভোগাচ্ছে ভোজ্যতেলের বাজারও।
পেঁয়াজ প্রসঙ্গে কদমতলী, রায়েরবাগ, শনির আখড়া ও কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ১১০-১২০ টাকার দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে মাসের ব্যবধানে তিন দফা দাম বেড়ে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। আগে যা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজে বাজার সামাল দেওয়া যাবে না। কারণ ভারতে পেঁয়াজের দামও অনেক চড়া। বিকল্প উৎস থেকে আমদানি বাড়ানো না গেলে দাম কমার সম্ভাবনা কম। নতুন পেঁয়াজ তথা আগাম পেঁয়াজ ওঠার আগ পর্যন্ত বাজার চড়া থাকবে। মজুদ ফুরিয়ে আসায় পুরনো পেঁয়াজের দাম স্থানীয় হাটেই এখন অনেক চড়া রয়েছে।
পেঁয়াজের মতো আলুর মজুদও তলানিতে বলছেন কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা। তারা বলছেন, নতুন আলু পুরোদমে উঠলে দাম কমে আসবে। এর আগে দাম কমার সম্ভাবনা কম। কারণ মজুদ কমে আসায় হিমাগারগুলো থেকে আলু বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। অপরদিকে নতুন আলু উঠতে শুরু করলেও তা চাহিদার বিপরীতে খুবই কম। যদিও ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এটাও জানান যে, সরবরাহ কমার অজুহাতে অনেক মজুদকারী হিমাগার থেকে অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। তারা কেনা দাম অনুযায়ী নয়, বরং বাজার বুঝে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা তেলের দাম বেড়েছে। যদিও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়েনি। বাজারে সয়াবিন তেলের লিটার ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায় পৌঁছেছে। যেখানে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ থেকে ১৭২ টাকা। এমন অসম বাজারের সুযোগ নিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারাও। অনেক দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ভোক্তাদের।
জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতা মো. মিলন হোসেন বলেন, বোতলজাত সয়াবিনের দাম এখন খোলা তেলের চেয়ে কম। এতেই তেলের বাজার ওলট-পালট হয়ে গেছে। অপরদিকে ডিলাররাও পুরনো কায়দায় টালবাহানা শুরু করেছেন।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিলাররা তাদের চাহিদামাফিক সয়াবিন তেলের বোতল সরবরাহ করছেন না। বলছেন সরবরাহ কম। আবার অনেক ডিলার খুচরা বিক্রেতাদের বাধ্য করছেন বোতলজাত সয়াবিন তেলের সঙ্গে কোম্পানির অন্য পণ্য কিনতে।
মিলন বলেন, কোম্পানির অন্যান্য পণ্য না অর্ডার দিলে ডিলাররা বলছেন, বোতল নাই। কিন্তু অন্য পণ্য অর্ডার দিলে ঠিকই বোতল দিচ্ছেন। আগেও এমনটা হয়েছে। এখন আবার শুরু হয়েছে। এতে খুচরা বিক্রেতারাও বিরক্ত।
এদিকে মুরগি ও ডিমের বাজার অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে বাজার ভেদে ব্রয়লারের কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। সবজির বাজারে দাম কমতির দিকে রয়েছে। শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তারা জানান, বাজারের বেশিরভাগ সবজির কেজি এখন কমবেশি ৬০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে শিম, কাঁকরোল, করলা ও বেগুনের দাম এখনও চড়া রয়েছে। কাঁচামরিচের কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ফুলকপি ও বাঁধা কপির দাম পড়তির দিকে রয়েছে বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা।