অবহেলায় পড়ে আছে ৩২৬ বছরের পুরনো মুদ্রণযন্ত্র

ইফতে খায়রুল আলম সজিব নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ:

0 comments

ময়মনসিংহ শহরের মৃত্যুঞ্জয় স্কুল এলাকার এক কোণে অবহেলায় পড়ে আছে ৩২৬ বছরের পুরনো একটি ঐতিহাসিক মুদ্রণযন্ত্র। যন্ত্রটির গায়ে খোদাই করা সন অনুযায়ী এটি নির্মিত হয়েছিল ১৬৯৯ সালে। সম্প্রতি পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির প্রতিনিধি দল এটি পরিদর্শন করে দ্রুত সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে।

গত ৬ আগস্ট পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডে গিয়ে মুদ্রণযন্ত্রটির দুটি ভাঙা অংশ উদ্ধার করেন। তবে দেখা যায়, যন্ত্রটির অনেক মূল্যবান অংশ ইতোমধ্যেই চুরি হয়ে গেছে। কারা বা কীভাবে এটি এখানে ফেলে রেখে গেছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।

কমিটির সদস্য সচিব ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ইউরোপে গুটেনবার্গের হাত ধরে ১৫ শতকে মুদ্রণশিল্পের সূচনা হয় এবং ১৫৫৬ সালে পর্তুগিজরা ভারতে প্রথম ছাপাখানা স্থাপন করে। সেই ধারাবাহিকতায় মুদ্রণযন্ত্রের ব্যবহার ময়মনসিংহেও শুরু হয়। তিনি বলেন, “১৬৯৯ সালে নির্মিত এ যন্ত্রটি প্রাচীন মুদ্রণশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারবে না।”

গবেষক স্বপন ধর জানান, ১৮৬৬ সালে শেরপুরের হরচন্দ্র চৌধুরী যন্ত্রটি ময়মনসিংহে আনেন। পরে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অনাথ বন্ধু গুহ তার ছাপাখানায় এটি ব্যবহার করেন। স্বাধীনতার আগে-পরে গফরগাঁওয়ের মাওলানা পাঁচবাগীর তত্ত্বাবধানে এটি চালু ছিল। এখান থেকে চাষী পত্রিকাসহ রাজনৈতিক ব্যানার, পোস্টার ও লিফলেট ছাপা হতো। সর্বশেষ এটিএম নুরুদ্দীনের তত্ত্বাবধানে ‘চাষী ছাপাখানা’ থেকে দৈনিক ইনসাফ প্রকাশিত হতো। প্রায় তিন দশক আগে তার মৃত্যুর পর ছাপাখানাটি বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই অমূল্য সম্পদ অবহেলায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে। কবি শামসুল ফয়েজ জানান, নুরুদ্দীনের পরিবার আমেরিকায় চলে যাওয়ার পর থেকেই ছাপাখানাটি অযত্নে পড়ে আছে।

অধ্যাপক স্বপন ধর বলেন, “ময়মনসিংহে অনেক পুরাকীর্তি অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।”

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি দেখেছেন। “সরকারিভাবে আমাদের কাছে হস্তান্তর করলে আমরা এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেব,” তিনি যোগ করেন।

স্থানীয়রা দ্রুত প্রশাসনের উদ্যোগে মুদ্রণযন্ত্রটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি জাদুঘরে প্রদর্শন করা গেলে ইতিহাসপ্রেমী মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপকৃত হতো।

You may also like

Leave a Comment